logo
ads

মার্কিন শ্রমবাজারে সংকটের মূল কারণ চাহিদা নয়, সরবরাহ সংকট

জেমি ম্যাকগিভার

প্রকাশকাল: ১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৭ এ.এম
মার্কিন শ্রমবাজারে সংকটের মূল কারণ চাহিদা নয়, সরবরাহ সংকট

সংগৃহীত ছবি

মার্কিন অর্থনীতির জটিল বাস্তবতা আবারও সামনে এনে চমকে দিলেন ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল। বাজারের বহু বিশ্লেষক ধারণা করেছিলেন, ডিসেম্বরেও নিশ্চয়ই আরেক দফা সুদের হার কমানো হবে। কিন্তু পাওয়েল জানিয়ে দিলেন—এটা মোটেই নিশ্চিত নয়। বরং তাঁর কথায় স্পষ্ট—হার কমালেও বর্তমান সমস্যার সমাধান হবে না।

ফেডের সুদের হার কমানোর মূল উদ্দেশ্য থাকে বাজারে চাহিদা বাড়ানো, ঋণ প্রাপ্যতা সহজ করা এবং কোম্পানিগুলোকে আরও বেশি কর্মী নিয়োগে উৎসাহ দেওয়া। কিন্তু মার্কিন শ্রমবাজারের বর্তমান দুর্বলতা চাহিদার কারণে নয়; বরং সরবরাহ সংকটই এখন বড় সমস্যা—যা ফেডের হাতে থাকা সুদের অস্ত্র দিয়ে ঠেকানো সম্ভব নয়।

ফেড চেয়েছিল শ্রমবাজারে কিছুটা প্রাণ ফেরাতে। কিন্তু পাওয়েল নিজেই বললেন—কাজ খুঁজতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা কমছে, অভিবাসন–নিয়ন্ত্রণ, বহিষ্কার অভিযান, তরুণদের কর্মবিমুখতা আর অবসরে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ায় শ্রম–সরবরাহ সংকুচিত হয়েছে। সুদের হার কমালে চাহিদা বাড়বে ঠিকই, কিন্তু কাজ করার মতো মানুষই যদি কমে যায়, তাহলে চাকরির বাজারে সেই সুফল নামমাত্রই দেখা যাবে। তাই বর্তমানে সুদের অস্ত্র “দড়ি ঠেলা” ছাড়া কিছু নয়।

অর্থনীতির আরেক অদ্ভুত দ্বৈততা চোখে পড়ছে—যাকে বিশ্লেষকেরা বলছেন ‘K-shaped economy’। উপরের দিকের রেখাটি ধনীদের জীবন—শেয়ারবাজার ফুলে–ফেঁপে উঠছে, করপোরেট মুনাফা বাড়ছে, মূলধনী লাভে পকেট ভরছে ধনী শ্রেণির। আর নিচের দিকের রেখাটি সাধারণ মানুষের—যারা চাকরি হারানোর ভয়ে দিন কাটাচ্ছে, খরচ কমাচ্ছে এবং বাড়তি খরচের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।

ফেডের সুদের হার কমানো ধনীদের সম্পদমূল্য আরও বাড়াতে পারে। সস্তা ঋণে বড় কোম্পানির শেয়ারমূল্য আরও ফুলবে, রিয়েল এস্টেট আরও চড়া হবে—যা ধনীদের সম্পদবৃদ্ধিতে সহায়ক, অথচ নিম্নবিত্তের দৈনন্দিন জীবনে তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। বরং আয়ের বৈষম্য আরও বাড়তে পারে।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মার্কিন সরকারি অচলাবস্থা—ফেডের হাতে থাকা ডেটা ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্যতা কমে গেছে। সরকারি তথ্যই যখন অনিশ্চিত, তখন নীতিনির্ধারণ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। ব্যবসায়িক বিনিয়োগ ও খুচরা বিক্রির চিত্রকে এখন শক্তিশালী দেখালেও, ছাঁটাইয়ের খবর বাড়ছে—যা ভবিষ্যতের সম্ভাব্য মন্দার পূর্বাভাস হতে পারে।

ফেডের সামনে এখন এক অদ্ভুত দ্বিধা—সুদের হার কমালে ধনীরা আরও শক্তিশালী হবে, না কমালে শ্রমবাজার দুর্বল অবস্থায় থাকবে। পাওয়েলের বক্তব্য ছিল এক ধরনের স্বীকারোক্তি—সুদের হাতিয়ার একা সব সমস্যার সমাধান নয়। শ্রমবাজারে সরবরাহ ঘাটতির সমাধান সুদের হারে লুকিয়ে নেই।

এমন অবস্থায় ডিসেম্বরের বৈঠক আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠল। গত দুইবারের মতো ধারাবাহিকভাবে তৃতীয় দফা সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা হঠাৎ করেই কমে এসেছে। আর বাস্তবতা হলো—যে কোনো সিদ্ধান্তই কোনো না কোনো শ্রেণিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কিন্তু সব সংকেত মিলিয়ে মনে হচ্ছে, আপাতত সুদের হার না কমানোই হয়তো মার্কিন অর্থনীতির জন্য স্বস্তিদায়ক হতে পারে।



লেখক: সাংবাদিক,ঋণ-রয়টার্স।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ